তীব্র গরমে রুম ঠান্ডা রাখবেন যেভাবে

apex property blog

যেকোন ক্ষেত্রে প্রতিকার অপেক্ষায় প্রতিরোধ ভালো। ঘর ঠান্ডা রেখে রাতে আরামে ঘুমানোর জন্য ঘরকে গরম থেকে আগে রক্ষা করতে হবে। ছোট ছোট কিছু টিপস মানলেই প্রাকৃতিক উপায়ে ঘর ঠান্ডা রাখা যায়। চলুন জেনে নেই সেই টিপস গুলো।

আলো বাতাস চিন্তা করে বাড়ির নকশা:

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে জায়গা সংকটের কারনে, বাড়ি খুব খোলামেলা ভাবে তৈরি করার খুব একটা সুযোগ থাকেনা। তবুও শহরে তারপরও আলো বাতাস আসা উপযোগী করে বাড়ি তৈরির বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। কেননা বাড়ি একবার তৈরি হলে তা পরবর্তীতে পরিবর্তনের সুযোগ থাকেনা। সেক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ফাঁকা জায়গা রেখে বিল্ডিং তৈরি করা উচিত। যেন সারাজীবনের জন্য স্বস্তি পাওয়া যায়।

পর্দা টেনে রাখা:

ঘর ঠান্ডা রাখতে দিনের বেলায় পর্দা টেনে রাখার বিকল্প নেই। বিশেষ করে দুপুরের তীব্র রোদের সময় দক্ষিণ ও পশ্চিম মুখী কোন জানালা কিংবা বারান্দা থাকলে সেই দিক দিয়ে যেনো রোদের তাপ প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। সন্ধ্যার পর গরম কমে আসলে পর্দা সরিয়ে দিতে পারেন। এতে বাইরের তাপ ভিতরে কম ডুকবে এবং রুম ঠান্ডা থাকবে।



দরজা এবং জানালার চারপাশে ফাঁকা বন্ধ করা: 

দরজা বা জানালায় কোনো রকম ফাঁকা থাকলে তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এতে শীতে ঘর গরম থাকবে এবং গরম কালে ঘর ঠাণ্ডা থাকবে।

ছোটখাটো এই পরিবর্তনগুলো ঘরে অনেক বড় পরিবর্তন আনে।

এয়ার কন্ডিশনার ছাড়া ঘর ঠাণ্ডা করার উপায়:

রোদের তাপ, বায়ুর সঠিক চলাচলের অভাব ইত্যাদি নানান কারণে ঘর গরম হয়ে যেতে পারে। ঘর ঠাণ্ডা রাখতে এয়ার কন্ডিশনার একমাত্র সমাধান নয়, এছাড়াও রয়েছে নানান সহজ কৌশল।

তাপমাত্রা কমে গেলে জানালা খোলা: 

দিনের বেলায় জানালা পর্দার টেনে রাখুন। এই সময় বাতাস সবচেয়ে বেশি গরম থাকে। কিন্তু যখন বাইরের তাপমাত্রা ভেতরের বাতাসের চেয়ে কম থাকে তখন জানালা পর্দা সরিয়ে দিলে ঘরে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হয় ও ঠাণ্ডা হয়ে আসে।

ঘরে ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাওয়ার জন্য রাখা একটি ফ্যান দ্রুত শীতল হতে সাহায্য করবে এবং বাড়ির বিপরীত দিকের জানালা খোলার ফলে আড়াআড়ি বায়ু প্রবাহ তৈরি হবে যা ঘরকে দ্রুত ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাব্রেটরি (এনআরডিসি)’র তথ্যানুসারে, বাতাস আসার জন্য ছোট জানালা এবং গরম বাতাস বের করে দেওয়ার জন্য বড় জানালা ব্যবহার করা উচিত, এতে ঘর দ্রুত ঠাণ্ডা হয়।
 

গরম বাতাস বের করে দেওয়া: 
‘এক্সস্ট ফ্যান’ ঘরের গরম বাতাস বের করে দেয়। বাথরুম বা রান্না ঘরে এটা ব্যবহারে গরম ভাব কমায়। রাতে জানালা খোলা রাখার পাশাপাশি এক্সস্ট ফ্যান চালিয়ে রাখা ঘর ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে।

আর্দ্র বাতাস:
ঘর ঠাণ্ডা রাখতে ফ্যানের পেছনে ভেজা কাপড়, ঠাণ্ডা বস্তু, এক বাটি বরফ বা ঠাণ্ডা পানির বোতল রাখলে ঠাণ্ডা বাতাস ছড়ায়, ফলে ঘর ঠান্ডা থাকে। এক্ষেত্রে টেবিল ফ্যান ব্যবহার করতে হবে।

সিলিং ফ্যান: 
ঘরের তাপমাত্রা কমানোর ভালো উপায় হল সিলিং ফ্যান ব্যবহার। এটা ঘরের তাপমাত্রা দশ ডিগ্রি কমাতে পারে ও এয়ারকন্ডিশনারের চেয়ে ১০ শতাংশ শক্তি কম অপচয় হয় বলে জানায়, এনআরডিসি।

চুলা বন্ধ রাখা:

চুলার গরম ঘরকে আরও উষ্ণ করে তোলে। তাই কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত চুলা বন্ধ করে দেওয়া ভালো। এতে ঘর বাড়তি গরম হবে না।

 

যন্ত্রপাতি ব্যবহার কমানো:

ঘরের ভেতর যতটা সম্ভব ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি কম ব্যবহার করা উচিত। ডিসওয়াশার, ওয়াশিং মেশিন, ড্রায়ারের মতো ইলেকট্রিক ডিভাইসগুলো রুমের তাপমাত্রা বাড়ায়। এমনটি মোবাইলের চার্জারও কিছুটা হলেও তামপাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। তাই যতটা সম্ভব এসব ডিভাইস ব্যবহার কমিয়ে করা উচিত। এতে বিদ্যুৎ বিলেও স্বস্তি মিলবে।

কথায় বলে, ‘প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ ভালো’। ঘর ঠাণ্ডা রাখার ক্ষেত্রেও এই বচন কার্যকর। ঠাণ্ডা রাখতে ঘর যতটা সম্ভব কম গরম হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাছাড়া বৌদ্যুতিক যন্ত্রের খরচ বাঁচাতেও ঘর ঠাণ্ডা রাখার কৌশলগুলো কার্যকর।

সূর্যের তাপ:

ঘর গরম হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে সূর্যালোক।

যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ডটগভ’য়ের তথ্যানুসারে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, আদর্শ জানালায় আসা সূর্যালোকের তিন চতুর্থাংশের বেশি তাপ ঘরে প্রবেশ করে এবং জানালা ঢেকে রাখা তা কিছুটা কমাতে সহায়তা করে। প্লাস্টিকের ব্যাকিংসহ মাঝারি রংয়ের ‘ড্রেইপ’ বা পাতলা পর্দা ৩৩ শতাংশ তাপ কমায় এবং ঘরে প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত তাপ কমাতে সহায়তা করে।
 

অপ্রয়োজনীয় যন্ত্র বন্ধ রাখা: 

ডিসওয়াশার, ওয়াশিং মেশিং, ড্রায়ার এমনকি মোবাইল চার্জার ইত্যাদি ছোটখাট যন্ত্রও ঘরের তাপ মাত্রা বাড়ায়। তাই এসকল যন্ত্র ব্যবহার হয়ে গেলে তা বন্ধ করে রাখা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল রিসোর্সেস ডিফেন্স কাউন্সিল’য়ের মতে, চুল শুকাতে ব্যবহৃত ড্রায়ারও ঘরের তাপমাত্রা বাড়ায়। তাই চুল বাতাসের শুকানোই ভালো।

ছাউনি ব্যবহার:

ঘরের আশপাশে গাছপালা থাকা ঘরে সরাসরি সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ঘর ঠাণ্ডা থাকে। জানালায় ছাউনি থাকলে প্রায় ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত তাপ কমাতে সহায়ক হয়।

অব্যবহৃত ঘরের দরজা বন্ধ রাখা: 

বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে না এমন কোনো ঘর বন্ধ করে রাখা উচিত। এতে ঘরের জায়গার আয়তন কমবে এবং ঘর ঠাণ্ডা থাকবে।


There are no comments yet

^ Go up