লাখ লাখ ভবন বৈধ করার উদ্যোগ

লাখ লাখ ভবন বৈধ করার উদ্যোগ

রাজধানী ঢাকাতে হাজারো নতুন পুরোনো ভবন চোখে পরে সবার। তবে অনেকেই হয়ত জানেন না এর মধ্যে বেশিরভাগ তৈরি হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই। রাজউকের এক হিসেবে উঠে এসেছে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৯৫ হাজার নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ ভবনের অবকাঠামো তৈরিতে নেয়া হয়েছে রাজউকের অনুমোদন। অর্থাৎ প্রায় ৯৫ শতাংশ ভবনের ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণকারি এই কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া হয়নি। সংস্থাটি অবশ্য এখন চাইছে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ডাপের আওতায় এসব ভবন বৈধ করতে। এজন্য ১২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিও করেছে রাজউক। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কমিটি গঠন বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করেছে রাজধানীর উন্নয়নকারি এই কর্তৃপক্ষ।

রাজউকের সেই আদেশে বলা হয়েছে, ড্যাপের নতুন সুপারিশ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বা শর্ত ভেঙে নির্মিত ইমারত বৈধ করার বিষয়ে খসড়া বিধি মালা প্রণয়ন করা হবে। এজন্য যে কমিটি করা হয়েছে তার আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে। সদস্য হিসেবে থাকছেন রাজউকের পরিকল্পনা ও উন্নয়নের দুই সদস্য, আইএবি সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কর্তা ব্যক্তিরা। তাদের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া শর্ত ভেঙে নির্মিত নির্মিত ইমারতগুলো বৈধ করার পদ্ধতি, ফি ও জরিমানা নির্ধারণ বিধিমালা প্রণয়ন। ঢাকা মহানগরের ইমারত নির্মানে যেসব ভবন যথাযথ পদ্ধতি অনুসরন করেনি সরেজমিনে গিয়ে তা দেখে প্রতিবেদন তৈরি করা। সবশেষে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করার জন্য ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটিতে উপস্থাপন।

এ বিষয়ে ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ড্যাপের সাথে অসংগতি রেখে কোন ভবন নির্মান করার অনুমতি দেয়া হবেনা। এছাড়া সরকারি খাল বা নদী, রাস্তা-ঘাট কিংবা জমি দখল করে তৈরি হওয়া স্থাপনাও তাদের অনুমোদন পাবেনা। এ বিষয়ে যথাযথ মনিটরিংয়ের জন্য বিধিমালা জারি করা হবে। সেখানেই সব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করা হবে। বিধিমালাটি তৈরির জন্য এরই মধ্যে কমিটি গঠন হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ড্যাপে উল্লেখ্য করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কিংবা শর্ত লঙ্ঘন করে ঢাকায় বিপুল পরিমান ভবণ নির্মাণ হয়েছে। এর পেছনে সচেতনতার অভাব ও আইন লঙ্ঘন প্রবণতাকে প্রধান কারন হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়। তবে জরিমানা দিয়ে ইমারত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সুপারিশ রয়েছে সেখানে। অবশ্য বলা হয়েছে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিটি। অর্থাৎ ক্ষেত্রবিশেষে ইমারতের প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংশোধন বা অপসারণ সাপেক্ষে বৈধতা দেয়ার বিধান থাকবে। তবে জরিমানার সাথে কোন কোন ক্ষেত্রে ভবনের কোন অংশ ভাঙ্গার ক্ষমতাও থাকবে মূল্যায়ন কমিটির হাতে। ক্ষতিপূরণের আদায় করা অর্থ নিজ নিজ এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নসহ নাগরিক সুবিধায় ব্যয় করার কথা উল্লেখ্য রয়েছে, যাতে পরিকল্পিত নগরায়ণে তা সহায়ক হয়।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, অবৈধ ভবন নির্মান ও অপসারণের ক্ষেত্রে রাজউকের আরোও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। তাদের মতে আইনের যথার্থ প্রয়োগই পারে একটি পরিকল্পিত সুন্দর নগরী গড়ে তুলতে।


There are no comments yet

^ Go up